রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
মাওলানা আবদুল জাব্বার:
মানব সম্পর্কের মধ্যে নম্রতা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলোর একটি। এটা সম্মান অর্জনের চাবিকাঠি। যে নম্রতার পথ অবলম্বন করবে, সে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হবে। মুমিনদের সম্পর্কে কোরআনে কারিমে উল্লিখিত গুণাবলিগুলোর একটি হলো নম্রতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতিশয় দয়াময়ের বান্দা তো তারাই, যারা ভূপৃষ্ঠে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা তাদের সালাম (বিদায় সম্ভাষণ) বলে।’ সুরা ফুরকান : ৬৩
নম্রতা প্রজ্ঞার প্রধান ও নিরাপত্তার দুর্গ। এটি গুণীদের নিদর্শন, সাফল্যের সোপান। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যাকে নম্রতা ও বিনয়ের গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে, কল্যাণ তার জন্য। আর যার মধ্যে নম্রতা নেই, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।’ তিরমিজি : ২১৪৫
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ দয়াশীল; তিনি দয়া ও নম্রতাকে পছন্দ করেন। নম্রতা ও বিনয়ের কারণে আল্লাহ দান করেন, কঠোরতা অবলম্বনকারীদের তা দান করেন না।’সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০৭
নম্রতা হলো, হৃদয়ের কোমলতা, কথা-কাজে বিনয়ী হওয়া, ভদ্রোচিত কাজ করা, সহজতাকে প্রাধান্য দেওয়া, উত্তম পন্থায় সবকিছুর সমাধান খুঁজে বের করা; সব কাজে সহজ ও উত্তম পন্থা অবলম্বন করা। সমাজে এমন অনেকে রয়েছে, যারা তাদের কর্মকা-ে সহিংস, হাত অনেক শক্ত। তাদের দুঃখ-দুর্দশা কখনো শেষ হয় না। এরা নির্দয়, অজ্ঞ, অহংকারী, কঠোর। সব কাজে তাড়াহুড়া করে। অবস্থা ও পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারে না। যে ব্যক্তি তার কাজকর্মে নম্রতা অবলম্বন না করে, তার জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে যায়। যে তার রাগের আনুগত্য করে, সেটাই তার অভ্যাস বনে যায়। যে দয়া ও নম্রতা পরিত্যাগ করে, তার বন্ধু-সাহায্যকারীও তাকে পরিত্যাগ করে। কবি বলেন, ‘তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধৈর্যধারণ করো। কেননা বুদ্ধিমানদের কাছে দয়া-নম্রতা বেশি মূল্যবান ও কল্যাণকর।’
জ্ঞানীরা বলেন, নম্রতার অর্থ নিজেকে এমনভাবে গড়া, যে নিজেকে অন্যের চেয়ে উচ্চতর হিসাবে দেখতে দেয় না এবং এ জন্য এমন ক্রিয়া এবং কথাবার্তার প্রয়োজন, যা অন্যকে সম্মান করা নির্দেশ করে। এটা খুব সহজে অর্জিত হয় না। কারণ কোনো মানুষ সহজে কারো কাছে ছোট হতে চায় না, পাওয়া সত্ত্বেও ভালো আসন ত্যাগ করে না। একটু ধৈর্য ধরে কারও কথা শুনতে চায় না। নিজেকে সবজান্তা, সর্ব ক্ষমতাবান জাহির করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এ কারণে মানুষ অন্যকে অন্যায়ভাবে অপমান করে, ছোট করে। এসব কাজ নম্রতার গুণের বিপরীত।
যে তার সমবয়সীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজার চেষ্টা করে এবং তাদের পেছনে ফেলে দেয় সে অহংকারী। যে নিজেকে তাদের পেছনে ফেলে দেয় সে বিনয়ী হয়। এটা হেরে যাওয়া নয়, পিছিয়ে থাকা নয়। প্রশংসারযোগ্য কিছু হলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা এবং তার প্রতি সবার হক আদায় করা, বিশ্বের সামনে একভাবে এবং অন্যান্য মানুষের সামনে অন্যভাবে কিছু উপস্থাপন না করা।
নম্রতার অনকে উপকারিতা রয়েছে, এর কয়েকটি হলো
১. নম্রতা এবং ভালোবাসার সঙ্গে করা সব কাজ হয় সুশৃঙ্খল।
২. এ গুণের অধিকারীরা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়।
এটা স্পষ্ট যে, অহংকারীদের কেউ পছন্দ করে না; কেউ তাদের মূল্য দেয় না। নম্রতা অহংকারের বিপরীত গুণ, এটা একজন ব্যক্তিকে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে।
আল্লাহতায়ালা যখন কারও কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে নম্রতা ও বিনয়ের গুণ দান করেন। পক্ষান্তরে তারাই আল্লাহর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, যাদের মধ্যে নম্রতা ও বিনয় থাকে না। সেই পরিবার অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, যারা নম্র ও বিনয়ী। ভালোবাসা ও কোমলতা তাদের ঘরকে সুশোভিত করে তোলে। তাদের অন্তর প্রশান্ত থাকে। পক্ষান্তরে সে পরিবারের জন্য দুর্ভোগ, যেখানে সর্বদা নিষ্ঠুরতা, ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকে। কঠোরতা, মতবিরোধ আর বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা তাদের সংসারের শান্তি বিনষ্ট করে দেয়।
ভয়েস/আআ